রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪

ধর্মের সঙ্গে অনেকেই সংস্কৃতির সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়: প্রধানমন্ত্রী

 

ধর্মের সঙ্গে অনেকেই সংস্কৃতির সংঘাত সৃষ্টি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

বুধবার (১৩ এপ্রিল) ৮ জেলার শিল্পকলা একাডেমি ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মের সঙ্গে অনেকেই সংস্কৃতির সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। এটা মোটেই ঠিক নয়। আমরা এটাই বলি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কাজেই উৎসব আমরা সবাই এক হয়ে পালন করব।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংস্কৃতি আমরা বাঙালি। আমাদের দেশে কিন্তু সব ধর্মের মানুষ বাস করে। সেখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই আছে। 

তিনি বলেন, আমাদের এই যে সব ধর্ম-বর্ণ, বিভিন্ন ছোট ছোট ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তাদের নিজস্ব যে সংস্কৃতি, অর্থাৎ শুধু ধর্মাবলম্বী নয়, আমাদের যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদেরও কিন্তু নিজস্ব সাংস্কৃতিক চর্চা আছে, সংস্কৃতি আছে। সেগুলো যাতে বিকশিত হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখেও কিন্তু আমরা প্রত্যেকটি এলাকায় তাদের এই সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ করে দিয়েছি।

সব জাতি-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি বিকশিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

শেখ হাসিনা বলেন, আবহমান কাল থেকে যেগুলো চলে আসছে এগুলোও যাতে বিকশিত হতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের ঐতিহ্য, এগুলো আমরা ভুলব না। কিন্তু আমরা সামনের দিকেও এগিয়ে যাব। আধুনিক যুগের যত সংস্কৃতি সেটাও আমরা রপ্ত করব। সেভাবে আমরা করতে চাই।

সবাইকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করি। এই একটা উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হই; সব বাঙালি এক হয়ে আমরা কিন্তু এই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি। যেখানে সবার একটি চমৎকার মিলন কেন্দ্র হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, পহেলা বৈশাখ, যে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ১৪০০ (১৯৯৩ ইংরেজি) সাল বরণ করতে গিয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এটা হচ্ছে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমনকি বটমূলে বোমা হামলা করেও মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। যাতে করে আমাদের এই সংস্কৃতি চর্চা বন্ধ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্ট থেকে প্রায় ২১ বছর বাংলাদেশ অন্ধকার যুগে কাটিয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা ফিরে পেয়েছি। আমরা বাঙালি, নিজেদের সাংস্কৃতি রয়েছে, সেটা যেন আরও বিকশিত ও উজ্জীবিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ খুবই সংস্কৃতিমনা। নৌকার মাঝিও নৌকা চালাতে চালাতে গান ধরে। এক সময় তো গরুর গাড়িই চলত, ও কি গাড়িয়াল ভাই... গানটি এখনো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যদিও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে সেসব হারিয়ে যেতে বসেছে।

যারা পুরোনো সিনেমা হল ভেঙে নতুন সিনেমা হল তৈরি করবেন, তারা বরাদ্দ পাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা আরও নতুন নতুন সিনেমা হল করতে চাইবেন তাদেরও টাকা দেওয়া হবে। আমি মনে করি, সিনেমা শিল্পটা উন্নত করা এবং বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটা দরকার। এফডিসি জাতির পিতার হাতে তৈরি। তাই শিল্পের বিকাশটা চতুর্মুখী হোক, সেটা চাই।

সরকার প্রধান বলেন, লোকজ সংগীত ও সাহিত্য যাতে আরও বিকশিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এগুলো আমাদের অমূল্য সম্পদ। এক-একটা অঞ্চল ভিত্তিক পালাগান, কবির লড়াই, কবিতা, গান, যাত্রাসহ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে অনেক ঐতিহ্য জানতে পারি।  

তিনি বলেন, আমরা আমাদের ঐতিহ্য ভুলব না, আবার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলতে হবে। কারণ আধুনিক যুগের সংস্কৃতির সঙ্গে ছেলেমেয়েরা চলতে পারে, রপ্ত করতে পারে। প্রযুক্তির সঙ্গে আধুনিক জ্ঞানও দরকার। কারণ একটা থেকে আরেকটা বাদ দেওয়া যাবে না। 

সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ