জনগণ পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও জনবান্ধব হিসেবে দেখতে চায়

বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও জনতার পুলিশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে দেখতে চায়। এই মতামতটি বিভিন্ন বিশিষ্টজনরা প্রকাশ করেছেন।
১ মে, বৃহস্পতিবার, রাজধানী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এই আলোচনা উঠে আসে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. সলিমুল্লাহ খান।
এই সভায় বিভিন্ন বিশিষ্ট নাগরিকরা আলোচনা করেন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, বিশিষ্ট শিল্পপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্ট্যাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান, সাবেক আইজিপি মো: আব্দুল কাইয়ুম, সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা। সভার সমাপনী বক্তব্য দেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজি গোলাম রসুল, যিনি নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার উপকমিটির সভাপতি।
এই মতবিনিময় সভায় শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, লেখক, খেলোয়াড়, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, অর্থনীতিবিদ, সাহিত্যিক, শ্রমিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখতে চায় জনগণ
ড. সলিমুল্লাহ খান মন্তব্য করেন, “আমাদের স্বীকার করতে হবে যে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় পতন ঘটেছে।” তিনি বলেন, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এবং পুলিশের কার্যক্রমে অনেক সমস্যা রয়েছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও যথাযথভাবে সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে পারিনি। এসব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।
প্রধান আলোচক ড. সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, পুলিশের জনপ্রিয়তায় যে পতন ঘটেছে, তার মূল কারণ পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সম্পর্কের সমস্যা। তিনি আরও বলেন, "পুলিশের সাথে জনগণের সম্পর্কের মূল কারণগুলো গভীরভাবে বোঝা দরকার। জনগণের বিপক্ষে পুলিশকে দাঁড় করানো উচিত নয়।”
রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পুলিশের আহ্বান
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, “আপনাদের (পুলিশ) জনগণের পাশে থাকতে হবে, এবং রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে হবে।” তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “৫ আগস্টের পর সবাই বুঝতে পেরেছে যে, শাসকের পক্ষে অন্ধভাবে চলে কীভাবে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়।”
সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, "৩২ বছর পুলিশে কাজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘সবাই তেলবাজি করি। মন্ত্রী-এমপিদের বাসায় যাই, ব্যক্তিগত লাভ এবং পদোন্নতির জন্য নানা অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে যাই। এটি দ্বিচারিতার লক্ষণ, যা আমাদের দূর করতে হবে।"
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা আরও বলেন, "পুলিশ সংস্কার কমিশন বলেছে, অনেক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। তবে তাদেরই যদি কোনো প্রভাব থাকে না, তাহলে এই কমিশনের কী দরকার? ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলা হয়নি, যেটা মূল সমস্যা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি পুলিশের স্বাধীন কাজের পথ খোলা না রাখে, তাহলে কিছুই সম্ভব নয়।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল পুলিশ সংস্কার
নুরুল হুদা আরও বলেন, “যতদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা থাকবে না, ততদিন পুলিশের স্বাধীনতা এবং কার্যক্ষমতা সত্যিই সম্ভব নয়। সমাজে বিষাক্ত বিভাজন তৈরি হয়েছে, যা সবাইকে বুঝতে হবে।
সমাপনী বক্তব্যে গোলাম রসুল বলেন, ‘আমরা জনগণের পাশে দাঁড়াতে চাই, জনগণের পুলিশ হতে চাই।’
মন্তব্য করুনঃ
মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)