শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত: লাশগুলোর দাবিদার নেই

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এসে কেউ কেউ এখনো ঘরে ফেরেননি। তাঁদের খোঁজে হাসপাতালেও ঘুরছেন স্বজনেরা। আবার মেডিকেল কলেজের মর্গে কিছু লাশ পড়ে আছে। এসব লাশের কোনো দাবিদার পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

লাশ খোঁজা ও লাশ পড়ে থাকার এ চিত্র পাওয়া গেছে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত সোমবার এ হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন কেউ না কেউ হাসপাতালে আসছেন হারিয়ে যাওয়া মানুষ শেষ পর্যন্ত লাশঘরে আছে কি না, তা খুঁজতে। অন্যদিকে সেখানকার মর্গে এখনো পড়ে আছে তিনটি লাশ। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আটটি মরদেহ পড়ে আছে বলে জানা গেছে। যাঁদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পড়ে থাকা লাশগুলো হাসপাতালে এসেছে গত ১৬ জুলাই থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে। লাশ নিতে কেউ না আসায় হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিউর রহমান একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলমান অবস্থায় পরিচয়বিহীন কিছু ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। এসব মরদেহের কোনো পরিচয়, ঠিকানা বা দাবিদার পাওয়া যায়নি। এমনকি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো সহযোগিতা পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞপ্তির শেষ অংশে বলা হয়েছে, সৎকারের প্রয়োজনে ওই বেওয়ারিশ মরদেহ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ রকম দুটি বিজ্ঞপ্তি এই প্রতিবেদকের চোখে পড়ে সোমবার। একটি পরিচালকের কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে, অন্যটি লাশঘরের দরজায়।

কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ–সংঘাতের ঘটনায় ৩০টির মতো মৃতদেহ ১৮ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে ২১টি মরদেহ নথিভুক্ত করা হয়। ৮-৯টি মরদেহ নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। আবার ৪ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে ২০টি মরদেহ হাসপাতালে আসে। তাঁদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন ছিল। সব মিলিয়ে এই হাসপাতালে অর্ধশতাধিক লাশ এসেছে।

গতকাল দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক মো. শফিউর রহমান  বলেন, ‘কয়েকটি লাশ মর্গে আছে। কেউ নিচ্ছেন না। আমরা একধরনের বিপদে আছি। লাশগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে।’

হাসপাতালের নিচতলায় লাশঘর। লাশঘরের দায়িত্বে থাকা একজন ডোম  বলেন, পাঁচটি লাশ ছিল। দুই দিনে দুটি লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। তিনটি লাশ আছে। তাঁদের মধে৵ একজনের বয়স ৩৫ বছরের মতো। অন্য দুজনের বয়স ১৮–১৯ বছর। হাসপাতালের পরিচালক বলেছিলেন, এই দুজন ছাত্র।

ডোমের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হওয়ার সময় এক যুবক পাশে এসে দাঁড়ান। ওই যুবক বলেন, তিনি তাঁর ভাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। লাশ বা লাশের ছবি তিনি দেখতে চান। ডোম ও একজন কর্মকর্তা মুঠোফোনে ছবিগুলো ওই যুবক ও এই প্রতিবেদককে দেখান। যুবক নিশ্চিত হন, তিনজনের কেউই তাঁর ভাই না।

উল্লিখিত যুবকের নাম আহসানুল্লাহ আলিফ খান। বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে। কাজ করেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম আশিকুর রহমান খান। বয়স ৩১ বছর। যখন যে কাজ পান, তা–ই করেন।

মুঠোফোনে ছোট ভাইয়ের ছবি দেখিয়ে আহসানুল্লাহ আলিফ খান বলেন, ‘হ্যায় (ছোট ভাই) আন্দোলনে যোগ দিতে ১ আগস্ট তারিখে ঢাকায় আসে। আর ফেরে নাই।’ এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে দুই দিন ভাইয়ের লাশ খুঁজেছেন, পাননি। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও খুঁজেছেন, পাননি। কোথায় খুঁজবেন, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

বেলা একটার দিকে আহসানুল্লাহ আলিফ খানের সঙ্গে কথা শেষ না হতেই পাশে এসে বসেন এক ব্যক্তি। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। লাশঘরের সামনে কী জন্য এসেছেন জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি বলেন, আন্দোলনের সময় থেকে তাঁর এক স্বজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে খুঁজেছেন। ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্বজন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি দ্রুত লাশঘরের সামনে থেকে চলে যান।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ