শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অভাবের কারণে ১০ হাজার টাকায় মেয়েকে বিক্রি করে দিলেন বাবা

 

অভাবের তাড়নায় ১৮ দিনের কন্যাশিশুকে বিক্রি করে দেন শহুরে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে। এই আশায় যে, মেয়েটা ভালো থাকবে, বেশ কিছু নগদ টাকাও পাওয়া যাবে। তবে এক প্রতারক চক্র তাঁদের সন্তান বিক্রির সিংহভাগ টাকা নিয়ে যায় ফলে যে পরিমাণ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তা তিনি পাননি। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে ওই শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ঘটনাটি পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামে ঘটে এমন ঘটনা। হতদরিদ্র ওই বাবার নাম পরিমল ব্যাপারী (৫৫)।

গত বৃহস্পতিবার রাতে নেছারাবাদ থানা-পুলিশের একটি দল ওই দম্পতিকে খুঁজে বের করে ঢাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এরপর গতকাল শুক্রবার শিশুটিকে তাঁর মা–বাবার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সন্তানের বাবা পরিমল ব্যাপারী বলেন, আমার কোনো জায়গাজমি নেই। অন্যের ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাস করি। ঘটক হিসেবে সামান্য কিছু আয় হয়। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়েই সংসার চলে। কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।

তিনি বলেন, ক'দিন পর উপজেলার দুর্গাকাঠি গ্রামের বিজন হালদার ও রনজিত কুমার আমার কাছে আসেন। তাঁরা বলেন, মেয়েটিকে এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিলে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবেন। মেয়েটিও সেখানে ভালো থাকবে। অভাবের কারণে আমি শিশুটিকে দত্তক দিতে রাজি হই।

পরিমলের স্ত্রী কাজল ব্যাপারী বলেন, ঢাকা থেকে প্রাইভেট গাড়িতে করে একটি বড়লোক পরিবার আসেন। তাঁরা বিজনের কাছে টাকা দেন। এরপর আমার বাচ্চাটি নিয়ে যান। বিজন আমাদের শুধু ১০ হাজার টাকা দিয়েছে। এরপর থেকে বিজনকে আমরা আর খুঁজে পাইনি।

সন্তান জন্ম দেওয়ার পর থেকে আমি অসুস্থ ছিলাম। মেয়ের মুখখানিও দেখতে পারিনি।
-কাজল ব্যাপারী 

নেছারাবাদ উপজেলার সমুদকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিজন একজন প্রতারক প্রকৃতির মানুষ। শুনেছি সে রনজিৎকে সঙ্গে নিয়ে পরিমলকে ফুসলিয়ে তাঁর কন্যাশিশুকে ঢাকার এক ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।

কিন্তু  বিজন হালদারের উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, দরিদ্র পরিমলের মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ধনাঢ্য নিঃসন্তান এক দম্পতির কাছে দত্তকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।

এসময় টাকা লেনদেনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেন।

নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবির মোহাম্মাদ হোসেন জানান, শিশুটিকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে শিশুটিকে বিক্রির কথা আমি শুনিনি। দত্তক নেওয়া পরিবার বলেছে, তাঁদের কাছে দত্তক দেওয়া হয়েছিল।

বর্তমানে শিশুটি মা–বাবার কাছে রয়েছে। আগামীকাল রোববার ওই কন্যাসন্তানসহ তাঁর মা–বাবাকে আদালতে তোলা হবে বলে জানান ওসি মো. আবির মোহাম্মাদ হোসেন।

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ