শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মঠবাড়িয়ায় ভোট ঘিরে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

 

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি: আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নের মধ্যে আগামীকাল বুধবার উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন। এ উপজেলার দাউদখালী, ধানীসাফা, টিকিকাটা ও বড়মাছুয়া এ ৪টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৯জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। মোট ভোটার সংখ্যা ৬৯ হাজার ২৬ জন এবং ভোট কেন্দ্র ৩৬টি। এরমধ্য সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ তবে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ ধানীসাফা ইউনিয় ও বড়মাছুয়া ইউনিয়নের ১৮টি ভোট কেন্দ্র।

 

তবে সর্বাধিক আলোচিত ধানীসাফা ইউনিয়নে মোট চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১জন। এর মধ্য আওয়ামী লীগের (নৌকা) প্রতীক প্রার্থী হারুন অর রশীদ তালুকদারের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন (চশমা) প্রতীক চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক রফিকুল ইসলাম।

 

২০১৬ সালের ২২ মার্চ ওই ধানীসাফা ইউনিয়নের ধানীসাফা ডিগ্রী কলেজ ভোট কেন্দ্রে ঘটেছিল এক হৃদয়বিদারক নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। নির্বাচন শেষে সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুন অর রশিদের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে বাকবিতন্ডা ও ধাক্কাধাক্কির এক পর্যায় সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইর ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতির তীব্র অবনতির আশংকায় পুলিশ ও বিজেবি গুলি ছুড়তে বাধ্য হন। গুলিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেদিন। গুরুতর আহত হয়েছিল অন্তত আরও ২০-২২জন । ভোট কেন্দ্রের অভ্যন্তরে সমর্থকদের সরকারি কাজে বাধা, হামলা-ভাঙচুর, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর বহিরাগত ক্যাডারদের হামলার অভিযোগে এ সময় অজ্ঞাতনামা অন্তত ১৩ শত জনকে আসামি করে কেন্দ্রের দ্বায়িত্বরত এক উপ-পরিদর্শক (এসআই) মঠবাড়িয়া থানায় মামলা করেন। নৃশংস এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছিল একাধিক তদন্ত কমিটি।

 

তৎকালীন মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সাফা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে গণনাকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হারুন অর রশীদের নৌকা মার্কার স্বাক্ষর বিহীন ৭ শতাধিক ব্যালট বাতিল করেন দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার দিপাঞ্জল পাল। বিষয়টি জানতে পেরে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি জানতে চান প্রার্থী হারুন অর রশীদ। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির সময় কেন্দ্রে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল বাসেতও কেন্দ্রে উপস্থিত হন। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময়ে বাইরে হারুন অর রশীদের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক ওই কেন্দ্রে জড়ো হয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং অফিসারকে ঘেরাও এবং তাদের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে আ.লীগ প্রার্থীর এসব কর্মী-সমর্থক কেন্দ্রে থাকা ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

 

ওসি আরও জানান, এ পরিস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কেন্দ্রে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা ২৯ রাউন্ড এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়। ওই এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনার রাতেই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কয়েক প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়ন করা হয়। রাতেই পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

 

মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র রফি উদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস হতাহতের বিষয় নিশ্চিত করে জানান, ধানীসাফা কলেজ কেন্দ্রের ফলাফল গণনার শেষে দেখা যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হারুন উর রশীদ ৭৪৬ ভোটে এগিয়ে আছেন, কিন্তু এ ব্যালটগুলোর সিল থাকলেও কোন স্বাক্ষর ছিল না। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলামের সমর্থকরা ব্যালটগুলো বাতিলের দাবি জানায়। এ নিয়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর সঙ্গে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায় তারা গুলি চালায়।

 

পরে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি এবং পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মানিকহার রহমানেকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পুলিশ সুপার মো. ওয়ালিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও ধানীসাফার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

 

উল্লেখ্য, আগামী ৫ জানুয়ারি মঠবাড়িয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ও উৎকণ্ঠাহীন উপহার দিবেন প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এমনটাই দাবি সাধারণ ভোটারদের।

 

উপজেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল হোসাইন জানিয়েছেন, এ নির্বাচকে ঘিরে নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা। শুধুমাত্র মঠবাড়িয়ার ধানীসাফা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১১জন প্রার্থী এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার, ৫৬৫ জন এবং মোট ভোট কেন্দ্র ৯টি।

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ