মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪

শান্তিরক্ষায় মিশন কম্বোডিয়া

 

৯ নভেম্বর, ১৯৯১। নমপেন। বেলা ১টা। মেকং নদী ও রাজপ্রাসাদের ওপর দিয়ে উড়ে থাই এয়ারওয়েজের সিলভার রঙের বিমানটি যুদ্ধবিধ্বস্ত নমপেন নগরীর পচেনতং বিমানবন্দরে ল্যান্ড করল। একজন তরুণী থাই আকাশকন্যা বিজনেস ক্লাসে বসা মধ্যবয়সী ‘বিশেষ যাত্রীকে’ নমপেনে পৌঁছানোর কথা মনে করিয়ে দিলেন। বিমান থেকে নমপেনের মাটিতে পা রাখলেন বাংলাদেশের কূটনীতিক এএইচএস আতাউল করিম।

২২ বছরের ভয়ংকর গৃহযুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউনাইটেড নেশনস ট্রানজিশনাল অথরিটি ইন কম্বোডিয়া (আনটাক) নামে শান্তি মিশনের পরিকল্পনা করেছে জাতিসংঘ। তবে মূল মিশন শুরুর আগে ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য ইউনাইটেড নেশনস অ্যাডভান্স মিশন ইন কম্বোডিয়া (ইউনামিক) নামে একটি অগ্রবর্তী ক্ষুদ্র মিশন গঠিত হয়েছে। আতাউল করিম এ মিশনের প্রধান হিসেবে আজ নমপেনে এসেছেন। আজ থেকেই ইউনামিকের আভিযানিক কার্যক্রম শুরু হলো। শহরে যাওয়ার পথে তিনি ভাবছিলেন এই ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশে কীভাবে জাতিসংঘ মিশনের নেতৃত্ব দেবেন। যাওয়ার পথে হঠাৎ চোখে পড়ল হেমন্তের ধানক্ষেত, সবুজ গ্রাম আর দীর্ঘ তালগাছের সারি। মেকং থেকে মনটি ছুটল মেঘনায়। মনে পড়ল বাংলাদেশের কথা। ‘আমাকে কম্বোডিয়ার এ মিশনে সফল হতেই হবে’—ভাবলেন আতাউল করিম।

১৫ মার্চ,১৯৯২ থেকে আনটাক মিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এটি ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে বৃহৎ (প্রায় ২০,০০০ শান্তিরক্ষী) ও ইতিহাসের জটিল মিশন। জাতিসংঘ আনটাককে যে ম্যান্ডেট দিয়েছিল তা নজিরবিহীন। এটি গতানুগতিক পিস কিপিং মিশন নয়। প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার বাজেটসমৃদ্ধ এ মিশনের কার্যপরিধি ছিল ব্যাপক, প্রায় একটি সরকারের মতো। এ মাল্টি ডাইমেনশনাল মিশনের প্রধান ছিলেন জাপানের নাগরিক ইয়াসুহি আকাশি। ফোর্স কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন লে. জেনারেল জেএম স্যান্ডারসন (অস্ট্রেলিয়া)। আনটাক ছিল অত্যন্ত সফল একটি মিশন। শান্তি মিশনের পরই দেশটি ফিনিক্স পাখির মতো নতুন জীবন লাভ করে। তবে এ মিশনে বেশকিছু দুর্বলতা ও ব্যর্থতাও ছিল।

কম্বোডিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষী দল (১০০২ জন) পুলিশ দল (২২৫ জন) ও নির্বাচন দলের (৭৫ জন) ব্যক্তিরা এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন।এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ আকারের মিশন, যেখানে একটি পদাতিক ব্যাটালিয়নসহ মোট ১ হাজার ৩০৫ জন বাংলাদেশী এ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইউনামিকের প্রধান হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন কূটনীতিক আতাউল করিম। আনটাক মিশনের ম্যান্ডেট শেষ হয় ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে এবং মধ্য নভেম্বরে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাহার শেষ হয়। তবে শান্তি মিশনের অর্জন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতি বজায় রাখতে এরপর ইউনাইটেড নেশনস মিলিটারি লিয়াজোঁ টিম (ইউএনএমএলটি) নামে ক্ষুদ্র (পলিটিকো-মিলিটারি) মিশন শুরু হয়। বাংলাদেশের কর্নেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান (পরে মেজর জেনারেল) এ মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অর্থাৎ কম্বোডিয়ায় পরিচালিত তিনটি মিশনের দুটিরই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই কৃতী সন্তান। এখানে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দুজন নারী সদস্য উম্মে মুসলিমা ও সাহিদা আকতার জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করেন (নির্বাচন দলে জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক)। কম্বোডিয়ার শান্তি মিশনে তিনজন বাংলাদেশী প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন—বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহী মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, বাংলাদেশ পুলিশের হেড কনস্টেবল আবুল বাশার আকন্দ ও জাতিসংঘের স্থায়ী কর্মকর্তা আবদুর রউফ।

ব্যাংককে চিফ লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কর্নেল ইকরামুল হক (পরে মেজর জেনারেল)। তিনিই ছিলেন মিশনের সবচেয়ে সিনিয়র বাংলাদেশী সামরিক কর্মকর্তা। ১৯৯৩ সালের মার্চে কর্নেল ইকরামুল হকের স্থলাভিষিক্ত হন কর্নেল এএনএম মুনীরুজ্জামান (পরে মেজর জেনারেল)।

তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন বা ব্যানব্যাট) পদাতিক ইউনিট হিসেবে প্রথমবারের মতো শান্তি মিশনে নিয়োজিত হয়েছিল। অধিনায়ক ও সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল খোন্দকার কামালুজ্জামানের (পরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) আসাধারণ নেতৃত্বে এ ব্যাটালিয়নের অফিসার ও সৈনিকরা দুর্ধর্ষ খেমাররুজ গেরিলাদের আক্রমণ ও প্রবল বিরোধিতা মোকাবেলা করে তাদের সেক্টরে নির্বাচন সম্পন্ন করেছিলেন। যা কম্বোডিয়া মিশনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে সংঘাতময় সিয়ামরিপ প্রদেশে মোতায়েনকৃত এ ব্যাটালিয়নের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল এবং অসাধারণ মানদণ্ড স্থাপন করেছিল।

সেনাবাহিনীর মাইন ক্লিয়ারেন্স ট্রেনিং ইউনিটটি প্রশিক্ষণ ও ডিমাইনিংসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেনাবাহিনীর সামরিক পর্যবেক্ষক, স্টাফ অফিসার ও মিলিটারি পুলিশের শান্তিরক্ষীরা অত্যন্ত প্রশংসনীয় পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ পুলিশ দলের সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ দলের প্রধান ছিলেন ডিআইজি শহুদুল হক (পরবর্তী সময়ে আইজিপি)। নির্বাচন দলের কর্মকর্তারা (জাতিসংঘ স্বেচ্ছাসেবক) অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছিলেন।

শান্তিরক্ষী হিসেবে আমরা কম্বোডিয়ায় অদ্ভুত জগৎ আবিষ্কার করি। একদিকে বিপ্লবের ছদ্মবেশে সমাজতান্ত্রিক খেমাররুজদের হাতে ছিন্নভিন্ন গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশ, একই দেশে চার সেনাবাহিনীর ভ্রাতৃযুদ্ধ, ১০ লাখ নিহত মানুষের ভয়ংকর বধ্যভূমি, শিবিরে শিবিরে বিভক্ত বিষণ্ন মানুষ। অন্যদিকে গৌরবময় অ্যাংকর সভ্যতা, প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা প্রভাবিত হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতির বিপুল নির্মাণযজ্ঞ-পৃথিবীর বৃহত্তম মন্দির অ্যাংকর ওয়াটসহ অসাধারণ স্থাপত্য শিল্পের বিচিত্র ঐতিহ্য, অপূর্ব নিসর্গ। রহস্যময় বেয়ন মন্দিরে কোজাগরী পূর্ণিমা। শান্তির অন্বেষণ। মেকং তীরে পৃথিবীর মিলন মেলা। নর-নারীর প্রেম-ভালোবাসা, রোম্যান্স।

১৯৯১ থেকে ২০২১—এই দীর্ঘ ৩০ বছরে দেশটিতে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। কম্বোডিয়ায় নিয়োজিত একজন শান্তিরক্ষী হিসেবে গভীর সন্তুষ্টির বিষয় হলো, ধীরগতিতে হলেও কম্বোডিয়া গৃহযুদ্ধ থেকে বেরিয়ে এসে মোটামুটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দেশটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। নমপেন দেখে এখন চোখ জুড়িয়ে যায়। কম্বোডিয়া এখন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের আকর্ষণীয় দেশ। প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশী পর্যটক সে দেশে ভ্রমণে আসে। গার্মেন্ট শিল্প গড়ে উঠেছে, যা এখন বাংলাদেশের নবীন প্রতিদ্বন্দ্বী। কম্বোডিয়ার হাজার মাইল দূর থেকে ভাবি, হাজারো বাংলাদেশী শান্তিসেনার প্রচেষ্টা ও তিনজন বাংলাদেশীর বুকের রক্ত ঢেলে দেয়া আত্মত্যাগ তাহলে বৃথা যায়নি। তবে দুঃখজনকভাবে গণতন্ত্র এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। কর্তৃত্ববাদী শাসন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়েও বেশ সমালোচনা আছে।

কম্বোডীয় নেতাদের বাস্তববাদী, ভারসাম্যমূলক ও বিচক্ষণ নীতি প্রশংসিত হয়েছে। খেমারদের জীবনে যেসব পরিবর্তন হানা দিয়েছে, তার সঙ্গে আদর্শ ও চিন্তার যোগ স্থাপন করে নিয়েছে তারা। সেজন্য নমপেনে একদিকে যেমন বিশাল ক্যাসিনো, আধুনিক গাড়ি, বিলাসিতার ভিড়, আরেকদিকে ইতিহাসের মতো বয়ে চলেছে মেকং নদী। সে নদীর রক্তধারার সঙ্গে কোনো বিরোধিতা নেই তাদের। একই ঘটনা ঘটেছে ভিয়েতনামে। পুরনো মতবাদ আঁকড়ে না ধরে ভিয়েতনাম এগিয়ে যাচ্ছে চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের দিকে। মানুষের মনোজগৎ ও সামাজিক বাস্তবতায় যে পরিবর্তন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই তো প্রগতি। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে কম্বোডিয়ার নেতারা জাতীয় সমঝোতা, জাতীয় পুনঃমিত্রতা (রিকনসিলিয়েশন) ও জাতীয় ঐক্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

একসময়ের পলপটের নেতৃত্বাধীন গণহত্যাকারী তথাকথিত কমিউনিস্ট খেমাররুজ দল আজ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। এ দলের পাপিষ্ঠ পাঁচ শীর্ষ নেতার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে (যাবজ্জীবন কারাদণ্ড)। তবে এ বিচারের পর কম্বোডিয়ার জনগণ ও বিশেষত নতুন প্রজন্ম অতীত ইতিহাসের দ্বন্দ্ব, বিরোধ, চর্চায় আবদ্ধ বা বন্দি না থেকে সামনে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কম্বোডিয়ার ট্র্যাজেডি থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো—জাতীয় ঐক্য।

কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বময় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ ও ২০১৭ সালে কম্বোডিয়া সফর করেন। কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেন ২০১৪ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ২০১৭-এর সফরে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী হুনসেন সেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কম্বোডিয়ার কিংবদন্তি নেতা প্রিন্স নরোদম সিহানুকের সাক্ষাৎ হয়েছিল। কম্বোডিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। তাই সেখানে ব্যাপক হারে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিক, এমনকি কৃষকদেরও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আছে। কম্বোডিয়া হতে পারে জনশক্তি রফতানির নতুন গন্তব্য। সেখানে শিল্প, কৃষি (জমি কিনে চাষাবাদ বা কন্ট্রাক্ট ফার্মিং) ও নির্মাণ ক্ষেত্রে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে পারেন। কম্বোডিয়ার বাজারে বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ আকর্ষণীয় পণ্য হতে পারে। পূর্ণাঙ্গ দূতাবাস না হলেও অন্ততপক্ষে নমপেনে এখনই কনস্যুলেট অফিস চালু করা প্রয়োজন। বর্তমানে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেন।

২০২০ সালে রাজা নরোদম সিহানুকের সম্মানে বারিধারার পার্ক রোডটিকে ‘কিং নরোদম সিহানুক রোড’ নামকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-কম্বোডিয়ার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো (দশটি) দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বীর শান্তিরক্ষীরা কম্বোডিয়ায় বন্ধুত্বের মেঠোপথ নির্মাণ করেছেন। আশা করি আমাদের গতিশীল কূটনীতিকরা একে একদিন বন্ধুত্বের প্রশস্ত হাইওয়েতে পরিণত করবেন।

বেশ কয়েকজন শান্তিরক্ষী, লেখক কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বইগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কবি জাহিদ হায়দারের ‘যখন ক্যাম্বডিয়ায়’, লেখক মিতালী হোসেনের ‘খেমারুরজদের দেশে’, লেখক জাহান আরা সিদ্দিকীর ‘সংবর্ত’, লেখক মেজর মো. আসাদুল্লাহর ‘মেকং এর নাকফুল’ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ারের ‘কম্বোডিয়া: শান্তিসেনার জার্নাল’।

কম্বোডিয়া শান্তি মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ছিল অসাধারণ গৌরবময়। শান্তিরক্ষীদের কঠোর প্রচেষ্টা ও জীবন বিসর্জনের ফলেই সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ কম্বোডিয়া রাষ্ট্র হিসেবে আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আমাদের শান্তিরক্ষীরা কম্বোডীয়দের হূদয়-মন জয় করেছিলেন। অন্যদিকে শান্তিরক্ষীরা কম্বোডিয়ার আশ্চর্য মায়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। অন্য শান্তি মিশনে এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি।

কম্বোডিয়ায় যেসব বিদেশীর সঙ্গে একত্রে পথ চলেছি, সে সময়ের দিন-রাত যাদের সাহচর্যে উজ্জ্বল ও বর্ণময় হয়েছিল—অন্তর্জাল, ফেসবুক ও মুঠোফোনের কল্যাণে পুরনো ও হারানো সেই বন্ধু স্বজনরা আবার যেন ফিরে এসেছে। স্মৃতিতে ভেসে আসে ফেলে আসা শান্তিরক্ষী জীবনের রোম্যাঞ্চকর সময়।

কম্বোডিয়ায় কর্মরত শান্তিরক্ষীদের মনে পুরনো স্মৃতিরা কখনো কখনো ফিরে আসে বানের জলের মতো। সেসব উত্তেজনাময় দিনের কথা ও স্মৃতি এখনো যেন রূপ-ছবির মতো ভেসে ওঠে মানসপটে—দোলা দেয় হূদমহলে। মনে পড়ে প্রিয় কিছু মুখশ্রী, সুখস্মৃতি। তুমি ভালো থেকো প্রিয় কম্বোডিয়া।

 

সম্পর্কিত শব্দসমূহঃ

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)