শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫

ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ঐক্যেই বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব: প্রধান উপদেষ্টা

বৃহস্পতিবার (১ মে ২০২৫) ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষ্যে শ্রম মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ প্রদান করেন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ একযোগে উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে এক লিখিত বক্তৃতায় সরকারপ্রধান শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং শ্রমিক-মালিকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন:

“১৮৮৬ সালের শিকাগোর রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। মে দিবস কেবল স্মরণ নয়, এটি এক আদর্শ—এক প্রেরণা।”

তিনি আরও বলেন:

“আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতা ধরে রাখতে পারি, তাহলে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সম্মিলিত শক্তিতে বৈষম্যহীন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির মূল ভিত্তি হলো পরিশ্রমী শ্রমিক এবং দায়িত্বশীল মালিক শ্রেণি। “একজনের পরিশ্রম এবং আরেকজনের নেতৃত্ব ও বিনিয়োগই গড়ে তোলে শিল্প ও উৎপাদন। কৃষি, পোশাক, নির্মাণ, প্রযুক্তি, পরিবহনসহ প্রতিটি খাতের পেছনে শ্রমিকের ঘাম আর মালিকের মেধা একসাথে কাজ করছে।”

“আমরা যদি ঐক্য ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখতে পারি, তাহলে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বৈষম্যহীন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।”

শ্রমিক কল্যাণে সরকারের কার্যক্রম:

● বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) কনভেনশনগুলোর স্বাক্ষরকারী হিসেবে শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানসম্মত অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করছে।  
● ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।  
● আগামী জুনে অনুষ্ঠিতব্য ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশগ্রহণও নিশ্চিত করেছে।  

 “আমাদের মূল প্রতিশ্রুতি হলো শ্রম কমিশনের সংস্কার কর্মসূচির সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা—প্রতিটি অক্ষরে। শ্রমিকের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করাকে আমরা শুধু তাদের অধিকার নয়, বরং শিল্প উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে বিবেচনা করি।”

কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তায় অগ্রগতি:

● বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধন  
● শ্রম আদালত ও আপিল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম গতিশীলকরণ  
● বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া জোরদারকরণ  
●শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় নিহত বা আহত শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা  
● ILO’র সহায়তায় ‘ইমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম’ পাইলট প্রকল্প চালু  

শিশু শ্রম নিরসন ও গ্রীন ফ্যাক্টরি এওয়ার্ড:

● শিশুশ্রম নির্মূলের বিভিন্ন কর্মসূচি  
● ৪৪টি খাতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ  
●পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করায় প্রতিবছর ‘গ্রীন কারখানা পুরস্কার’  

শ্রম-শান্তি রক্ষায় সাফল্য:

বক্তৃতায় সরকারপ্রধান উল্লেখ করেন, মালিক-শ্রমিকের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে শ্রম অসন্তোষ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। শিল্পকারখানায় বকেয়া বেতনজনিত কারণে সম্ভাব্য উত্তেজনা যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা হয়েছে।

শেষে তিনি বলেন, “শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করা মানে শুধুমাত্র তাদের জন্য ভালো করা নয়—এটি শিল্পখাত, জাতীয় প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির উন্নয়নের পূর্বশর্ত। একটি দেশ তখনই প্রকৃত অর্থে সমৃদ্ধ হয়, যখন শ্রমিক নিরাপদে কাজ করতে পারে এবং মালিক তার শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করে।”

মে দিবস ও জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে সরকারপ্রধানের প্রতিশ্রুতি: "শ্রমিক-মালিকের ঐক্যই দেশের নতুন গর্ব"

মন্তব্য করুনঃ

মন্তব্য সমূহ (কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।)

এই শাখা থেকে আরও পড়ুনঃ