ঘোষিত সময়েই নির্বাচন: নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ঘোষিত সময়ই নির্বাচনের জন্য সর্বোত্তম। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ১৭ বছর পর দেশের ইতিহাসে একটি সুশৃঙ্খল ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আগামী জুলাই মাসে সকল রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে 'জুলাই সনদ' বা 'জুলাই চার্টার' জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে কোনো বিপ্লবের এক বছরের মধ্যে কোনো দেশে অর্জিত সর্বোচ্চ জাতীয় ঐক্যের নজির। এই সনদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ কাঠামো নির্ধারণের দিকনির্দেশনা থাকবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।

বুধবার লন্ডনের চ্যাথাম হাউসে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেন, নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হলে তিনি আর কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকবেন না। তার মতে, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটিই হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সাত বছর আগে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের অনেকে তখন শিশু ছিল। বর্তমানে তারা কিশোর কিংবা যুবক হয়ে উঠেছে, যাদের নেই কোনো পরিচয় কিংবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নিশ্চয়তা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থায়ন বন্ধ করার পর তাদের ভরণ-পোষণের প্রশ্ন সামনে এসেছে, কারণ তাদের অবস্থানের কোনো নির্ধারিত সময়সীমা নেই। এ সংকট মোকাবিলায় সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক কমিশন কাজ করছে। এসব কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, সব দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো মানবজাতির জন্য ভয়াবহ হুমকি সৃষ্টি করছে মন্তব্য করে ড. ইউনূস বলেন, ‘‘আমরা এক ভুল সভ্যতার অংশ হয়ে পড়েছি। নিজেরাই এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করেছি যা আত্মবিধ্বংসী। মানবজাতির রক্ষায় এই ধারা পরিবর্তনের জন্য এখনই সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।’’